
মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। তবে কার্যত সব নিয়ন্ত্রণ এখনো সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে রয়েছে, যিনি অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় জানানো হয়, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর যে ফরমানের (ডিক্রি) মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করা হয়েছে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি তদারকির জন্য একটি বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়েছে।
তবে এই নতুন প্রশাসনিক কাঠামো বাস্তবে কোনো মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না। সেনাবাহিনীর প্রধান ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের নেতা মিন অং হ্লাইং এখনও দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছেন। তিনি একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বও ধরে রেখেছেন।
সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন জানান, জরুরি অবস্থার যে আদেশ সারা দেশে জারি ছিল, সেটি বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।” অভ্যুত্থানের পর থেকে এই জরুরি অবস্থা সাতবার নবায়ন করা হয়েছিল। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমকে আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান বলেছেন, আগামী ছয় মাস নির্বাচনের প্রস্তুতি ও আয়োজনের জন্য নির্ধারিত হবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চির সরকারকে সরিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশজুড়ে চলছে গৃহযুদ্ধ, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলে সেনাবাহিনীর তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। তবে জান্তা সরকার এই অভিযোগগুলো বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা তীব্র সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে "প্রহসন" বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, এই নির্বাচন মূলত সেনা-সমর্থিত দলগুলোর আধিপত্য নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হবে। বিরোধী দলগুলোর অনেককেই হয় নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে, নয়তো তারা অংশগ্রহণ বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মিয়ানমার-সংক্রান্ত বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন মন্তব্য করেছেন, ক্ষমতায় যে রদবদল করা হয়েছে, তা লোক দেখানো। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা আগের মতোই অত্যাচারী ও দমনমূলক আচরণ চালিয়ে যাবেন।