
ভারতে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, এই বিলের মাধ্যমে সংবিধানের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল করার চেষ্টা চলছে।
এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাম্প্রতিক মন্তব্য নতুনভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সংসদে তিনি বলেন, আইনের শাসন সবার উপরে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকেও জবাবদিহি করতে হবে, এমনকি পদত্যাগও করতে হতে পারে।
তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে সংসদ ভবন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার পরিমাণে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিল পেশের পর থেকেই বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীরা সরকারের উদ্দেশ্যে অভিযোগ তোলেন যে সংবিধানের মূল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, এটি সংবিধানের উপর আক্রমণ। আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনে নামব। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই বিল জনগণের কণ্ঠরোধের ফাঁদ। সরকার জনসমর্থন হারিয়ে ভয় দেখানোর পথ বেছে নিয়েছে।
বিপরীতে, বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে অমিত শাহ জোর দিয়ে বলেছেন, বিরোধীদের আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। সংবিধানের কাঠামো অক্ষুণ্ণ রয়েছে। কিন্তু আইন ভাঙলে বা সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন করলে প্রধানমন্ত্রীও রেহাই পাবেন না। আমাদের গণতন্ত্রের শক্তি এটাই।
বিরোধীরা এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, অমিত শাহ স্বীকার করেছেন যে, এই বিলের পর পরিস্থিতি এমন দাঁড়াতে পারে যেখানে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ অনিবার্য।
গণমাধ্যমও বিষয়টি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করছে। দ্য হিন্দু লিখেছে, অমিত শাহের মন্তব্য মূলত সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তবে রাজনৈতিকভাবে বিপরীত বার্তাও বহন করছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধীদের হাতে অজান্তেই রাজনৈতিক শক্তি তুলে দিয়েছেন। আনন্দবাজার পত্রিকা বলেছে, এই বিতর্ক থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যেও চাপ অনুভূত হচ্ছে, যা বিরোধীরা সুযোগ হিসেবে নিতে পারে।
এদিকে, দেশজুড়ে ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক ইউনিয়ন ও নাগরিক মঞ্চও রাস্তায় নামছে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা বিক্ষোভ করে বলে, সংবিধান রক্ষা করতে না পারলে কোনও সরকার বৈধ নয়। মুম্বই, কলকাতা ও চেন্নাইতেও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বিনিয়োগ ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব আশ্বাস দিচ্ছে, বিল পাস হলে সংবিধান আরও শক্তিশালী হবে। তবুও রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অমিত শাহের মন্তব্য বিরোধীদের লড়াইকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।