
নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্বের প্রস্তাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, কার্যকর প্রশাসনের জন্য নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী রাখতে হবে, কারণ কেবল দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতা কেড়ে নিলে সুশাসন ব্যাহত হবে।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য সংলাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশে যেন আবার স্বৈরশাসনের আবির্ভাব না ঘটে তা নিশ্চিত করতেই বিএনপি সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে একইসঙ্গে তিনি নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা সীমিত করার যেকোনো উদ্যোগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
সালাহউদ্দিন বলেন, নির্বাহী বিভাগকে সংসদ এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তবে কর্তৃত্বহীন জবাবদিহি অর্থহীন। যদি নির্বাহী বিভাগ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে কেবল দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয় তাহলে তা কার্যকর শাসন পরিচালনাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
তিনি জানান, বিএনপি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ১০ বছরের মেয়াদসীমা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা ইতোমধ্যে গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও, একটি স্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাবও তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়, যাতে সরকার ও বিরোধী দল ছাড়াও বিচার বিভাগের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এই কমিটি নির্বাচন কমিশনের সদস্য নিয়োগে দায়িত্ব পালন করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বাধ্যবাধকতা সংযোজনের প্রস্তাবও বিএনপি দিয়েছে, যা অনুমোদন পেয়েছে। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে।
সাংবিধানিক ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস করা হলে তা দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, জনগণের আশা পূরণ ও সুশাসন নিশ্চিতে নির্বাহী বিভাগকে ক্ষমতায়িত করতে হবে, দুর্বল নয়।
সংলাপে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলটি সম্পূর্ণ গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আলোচনায় যুক্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেখানে মৌলিক মতপার্থক্য রয়েছে, সেখানে আপত্তি জানানো কিংবা সাময়িকভাবে সংলাপ ত্যাগ করাও গণতান্ত্রিক আচরণের অংশ।
তার বক্তব্যে আরও ছিল, “ঐকমত্য মানেই একতরফাভাবে মত চাপিয়ে দেওয়া নয়। মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক এবং সেই ভিন্নমতের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র এগিয়ে যায়।”
এছাড়া সালাহউদ্দিন মন্তব্য করেন, কাউকে ‘ভিন্নমতের নোট’ দেখিয়ে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত নয় এবং “সত্যিকারের জাতীয় ঐকমত্য মানে একসঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়া। বিএনপি বাদ পড়লে সেটি কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য হবে?”
তিনি জানান, বিএনপি পরবর্তী ধাপের সংলাপেও অংশ নেবে এবং গঠনমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় কমিশনের বৈঠকে সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও হিসাব নিয়ন্ত্রক এবং ওম্বাডসম্যান নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের একপর্যায়ে বিএনপি প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন আহমদ ও ইসমাইল জবিউল্লাহ কিছু সময়ের জন্য সংলাপস্থল ত্যাগ করেন। পরে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে তারা পুনরায় আলোচনায় যোগ দেন।