
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে প্রায় ৪৪৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে। এ অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে ৯৩০ কোটি টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দুদক। সোমবার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিবন্ধীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে 'সূচনা ফাউন্ডেশন' নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এরপর এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে 'ডোনেশন' নামে ঘুষ আদায় করে তা আত্মসাৎ করা হয়।
সূচনা ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডে ছিলেন সায়মা ওয়াজেদ, প্রফেসর ডা. মাজহারুল মান্নান, সাবেক বিসিবি সভাপতি ও সংসদ সদস্য মো. নাজমুল হাসান পাপন, সায়ফুল্লাহ আব্দুল্লাহ সোলেনখী, জ্যান বারী রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান প্রাণ গোপাল দত্ত, এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য এম এস মেহরাজ জাহান, প্রফেসর রুহুল হক, শিরিন জামান মুনির এবং ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ।
দুদকের মহাপরিচালক বলেন, "ব্যবসায়ীরা ওই ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়ে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন।" এ মামলায় অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন হামিদ রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান ইন্তেকাবুল হামিদ, সাবেক মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি সালমান এফ রহমান, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আজিজ খান, সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ী এ কে এম রহমাতুল্লাহ, ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দীন হাসান রশিদ, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল এবং বিল ট্রেড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান।
এছাড়া এনবিআরের সাবেক ও বর্তমান ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সূচনা ফাউন্ডেশনকে কর মওকুফ সুবিধা দিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, সদস্য মীর মুস্তাক আলী, চৌধুরী আমির হোসেন, পারভেজ ইকবাল, মো. ফরিদ উদ্দিন, মো. ফিরোজ শাহ আলম, ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, ড. মাহবুবুর রহমান, মো. লোকমান চৌধুরী, মো. রেজাউল হাসান, মো. জিয়া উদ্দিন মাহমুদ, আব্দুর রাজ্জাক, এ এফ এম শাহরিয়ার মোল্লা (আবু ফয়সাল মো. শাহরিয়ার মোল্লা), সুলতান মো. ইকবাল, তন্দ্রা সিকদার এবং কালীপদ হালদার।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার মাধ্যমে সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে প্রাপ্ত অর্থ এবং সেই নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। মোট আত্মসাতের পরিমাণ ৪৪৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার ১৯৩ টাকা। এছাড়া ২০১৫-১৬ করবর্ষ থেকে ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত ৯৯ লাখ ৪ হাজার ৫৩১ টাকা কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদক ধানমন্ডির সুধাসদনে অভিযান চালিয়ে সূচনা ফাউন্ডেশনের খোঁজ করে। ফাউন্ডেশনটি একাধিক ঠিকানা ব্যবহার করলেও, কোনোটিতেই এর কার্যকর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবুও, সাত মাসের অনুসন্ধানে অর্থ আত্মসাৎ, কর ফাঁকিসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ সংগ্রহ করেছে দুদক।