
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার (৩১ আগস্ট) ডেইলি স্টার ভবনে, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি), সহযোগী হিসেবে ছিল বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন।
আলী রীয়াজ সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে জানান, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় আসার সময় আপনার কাছে আসবেন। এখনই তাদের কাছে সাংবাদিকদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতি জানতে চান। তাদের অঙ্গীকার করতে বলুন।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজের জন্য সুরক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন নয়, বরং প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগ প্রয়োজন। ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক নয়। তাহলে মালিকরা কেন এগুলো চালান? এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য উদ্দেশ্য আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করার প্রশ্ন তুলুন।
আলী রীয়াজের মতে, মালিকরা জানেন সাংবাদিকরা তাদের স্বার্থে কাজ করবেন, ফলে পেশাগত সুবিধা দেওয়া হয় না। “এই মালিকানার ধরন স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পথে বাধা,” তিনি বলেন। এছাড়া, মোবাইল ভায়োলেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু সাংবাদিক সুবিধা পাচ্ছেন, একজনকে সরিয়ে আরেকজনকে বসানোর ঘটনা ঘটছে। যেখানে নাগরিকদের আইনি সুরক্ষা নেই, সেখানে সাংবাদিকের আইডি কার্ড কতটা নিরাপদি নিশ্চিত করতে পারবে?
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক, দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহউদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মিনহাজ উদ্দীন, সিনিয়র সাংবাদিক হাসনাইন খুরশেদ, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সহ-সভাপতি মুনিমা সুলতান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল সোহেল এবং বিজেসির ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, তালাত মামুন ও মানস ঘোষ।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিজেসির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন ও বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. আল মামুন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেসির নির্বাহী মিল্টন আনোয়ার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইলিয়াস হোসেন ও শাহনাজ শারমিন।
রেজোয়ানুল হক বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। অতীতে সরকারগুলো গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেছে, আর আমরা কখনো কখনো ব্যবহৃত হয়েছি। আমরা সাংবাদিক, না রাজনৈতিক কর্মী? যতদিন এই বিভ্রান্তি থাকবে, ততদিন সরকার আমাদের ব্যবহার করবে।
সালেহউদ্দিন বলেন, পুরো দেশের গণমাধ্যম সংস্কারের প্রয়োজন। টাউট, ব্ল্যাকমেইলিং ও দালালি সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। এ বন্ধ না হলে মান ও মর্যাদা ফিরে আসবে না।
মো. মিনহাজ উদ্দীন মন্তব্য করেন, সরকার গণমাধ্যম বা সম্প্রচার কমিশন গঠন করবে না, কারণ এতে তাদের কর্তৃত্ব কমবে।” হাসনাইন খুরশেদ যোগ করেন, “গণমাধ্যম সংস্কারে প্রাধান্য দিতে হবে এবং মালিকদের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় ঘাটতি আছে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এগুলো পূরণ করতে হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল সোহেল বলেন, “প্রথমে আমাদের স্পষ্ট করতে হবে, আমরা সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নই। এই মূল সমস্যা সমাধান করতে হবে।