ধামরাইয়ে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা: নেপথ্যে, ‘মাটি ব্যবসার বিরোধ’
- ধামরাই প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১২:৪৯ এম, ২১ মার্চ ২০২৫

ঢাকার ধামরাইয়ে আবুল কাশেম (৫৭) নামে বিএনপির এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, মাটির ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে কোপানো হয়। মৃত্যুর আগে কোপানোয় জড়িতদের নামও জানিয়ে গেছেন নিহত বিএনপি নেতা।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকায় বাড়ির পাশে সড়কের ওপরে তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
নিহত আবুল কাশেম (৫৭) ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকার মৃত রইজ উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। তিনি গাংগুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। তিনি এক ছেলের জনক।
স্ত্রীর ভাষ্য, মৃত্যুর আগে কোপানোয় জড়িতদের নাম জানায় আবুল কাশেম। কোপানোয় জড়িতরা হলেন- আব্দুল জলিল, বাছেদ, বাবু, বিল্টু, আলী, আহাদ, সাইম, গফুর, মালেক। তারা গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদের অনুসারী বলে দাবি নিহত কাশেমের স্ত্রীর।
নিহতের স্ত্রী শাহিদা আক্তার বলেন, আমার স্বামী মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বাড়ি থেকে পাকা সড়কে ওঠার পর সেখানেই কোপায় করেছে। তখন মারা যায়নি। তখন পাশের বাড়ির একজন ডাকে, ভাবি ভাইকে মেরে ফেললো। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছি। তখন নামগুলো বলে যায়। তারা হলেন, আব্দুল জলিল, বাছেদ, বাবু, বিল্টু, আলী, আহাদ, সাইম, গফুর, মালেক। এরমধ্যে আহাদ আওয়ামী লীগের সময় সারের ডিলার শিপ এনে সারের ডিলারি করে। ওরা মাটির ব্যবসা করে আওয়ামী লীগের সময় কোটিপতি হয়েছে। এখনও ওরা মানুষকে নির্যাতন করে। নির্যাতন করে মেরেই ফেললো। এরা মুরাদের গ্রুপ করে।
নিহতের ছেলে কামরুল হাসান বলেন, ৫ তারিখের পর আওয়ামী লীগের পটপরিবর্তন হয়, তখন তারা ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। আমার বাবা গাংগুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। উনার সঙ্গে বিরোধ মূলত উনি মাটির ব্যবসা করতেন, মাটির ব্যবসা নিয়ে মূলত বিরোধ। এই বিরোধ নিয়ে কিছু দিন আগে আমাদের ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মফিকুল ইসলাম তাকেও কোপায় এই গ্রুপটা। এর কিছু দিন পর আজকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাবাকে হত্যা করা হলো। সবাই মুরাদ গ্রুপের রাজনীতি করে।
গাংগুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক মোজা বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।’ রাজনৈতিক বিরোধের কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা তার।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ বলেন, প্রথমত, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যেহেতু তিনি নাম বলে রেখে গেছেন। তিনি আমার অনুসারী বলেছেন, আমি বলবো আমার অনুসারী সারা ধামরাইয়েই রয়েছে। তারা যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকে, আমি এদের বিচার চাই। এই ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। আমি নিজে তাদের বিচার চাই। আমি কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করি না। কারণ যেটা ন্যায়, যেটা সত্য, সেটি প্রতিষ্ঠিত হোক। মিথ্যা অভিযোগের কারণে যাতে যারা প্রকৃত দোষী, তারা বের হয়ে যেতে না পারে।
সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি চিকিৎসক ডা. মেরাজুর রেহান পাভেল বলেন, তার ডান পায়ের পেছনে থাইয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। খুব সম্ভবত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা গেছে, এটা আমরা ধারণা করছি। কয়েকটি গভীর ক্ষত রয়েছে। বাকিটা পোস্টমর্টেমের পর জানা যাবে।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনচার্জ মো. ইউসুফ বলেন, দুপুর ১টার দিকে মৃত অবস্থায় তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, নিহতের স্ত্রী কোপানোর সঙ্গে জড়িতদের নাম জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে হত্যার খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এই বিষয়ে তদন্ত চলমান। হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে।