
একসময় প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে ঘুমকাতুরে বলে ব্যঙ্গ করা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার নিজেই সেই অভিযোগের মুখোমুখি। মঙ্গলবার ২ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত দীর্ঘ মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাকে কয়েক দফা চোখ খোলা রাখতে লড়াই করতে দেখা গেছে, যা তার বয়স ও কর্মক্ষমতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সিএনএন জানায়, ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিটব্যাপী বৈঠক জুড়ে একাধিকবার ট্রাম্পের মনোযোগ বিচ্যুত হয়েছে বলে মনে হয়েছে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা যখন তাকে ঘিরে ধারাবাহিকভাবে প্রশংসা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখনও প্রেসিডেন্টের চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে আসছিল।
স্থানীয় সময় দুপুরের পর শুরু হওয়া এই বৈঠকে সবচেয়ে নজরকাড়া মুহূর্ত দেখা যায় যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতিকে “পরিবর্তনমূলক” বলে অভিহিত করছিলেন। রুবিওর পাশের চেয়ারে বসা ট্রাম্প তখন এক পর্যায়ে সামনের দিকে ঢলে পড়েন এবং কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ রাখেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক যখন তার বাণিজ্য যুদ্ধের প্রশংসা করে বলেন, “সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্টের জন্য সর্বকালের সেরা মন্ত্রিসভা,” তখনও ট্রাম্পকে চোখ খুলে রাখতে স্পষ্ট কষ্ট করতে দেখা যায়। শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহন ও স্বাস্থ্য ও মানবিক পরিষেবামন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের বক্তব্য চলাকালে প্রেসিডেন্ট প্রায় ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থির হয়ে চোখ বন্ধ রেখেছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
তবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট এ ধরনের ধারণা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট “মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন এবং পুরো তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক পরিচালনা করেছেন।” তার দাবি, এ বছর নবমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রশাসনের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ এজেন্ডায় অর্জিত কাজের বিস্তৃত পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে।
গত সপ্তাহেই নিউইয়র্ক টাইমসের একটি বিশদ প্রতিবেদন ট্রাম্পের দৈনন্দিন কার্যসূচি ও জনসম্মুখে উপস্থিতি বিশ্লেষণ করে তার বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তোলে। সেখানে বলা হয়, ৭৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদে এসে আগের চেয়ে কিছুটা ধীরগতির। ওই সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের “পাগল” বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, “ট্রাম্প চটপটে, তারা চটপটে নয়।”
এক মাসেরও কম সময়ে এমন নজির এটি দ্বিতীয়। গত ৬ নভেম্বর ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটন পোস্টের ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ট্রাম্প প্রায় ২০ মিনিট চোখ খোলা রাখতে সংগ্রাম করেছিলেন।
এদিকে কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্টের ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং বা এমআরআই পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও হোয়াইট হাউস জানিয়েছে এটি রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন সাধারণত নিয়মিত পরীক্ষায় এমআরআই থাকে না। সোমবার লেভিট জানান, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কার্ডিওভাসকুলার ইমেজিং পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল, রক্তনালিতে কোনো সংকোচন নেই… এক কথায় তার হৃদ্যন্ত্র চমৎকার অবস্থায় আছে।” কিন্তু পরীক্ষা কেন করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা না দেওয়ায় প্রশাসন প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য তথ্য যথাসময়ে প্রকাশ করছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ বেড়েছে।
সূত্র: সিএনএন