
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনার তদন্তে কোথায় পৌঁছেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তা জানাতে আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) সমন্বিত সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। এতে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য, তদন্তের অগ্রগতি এবং গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
এদিকে হাদিকে গুলির ঘটনায় আগে করা হত্যাচেষ্টা মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত আদেশ দেওয়া হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, “সব সংস্থা মিলে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে তদন্তের সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করা হবে।”
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন ওসমান হাদি। ঘটনার দিন প্রচারণা শেষে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এই হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আটজনকে আটক করেছে র্যাব। তারা হলেন প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির, মা হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, সহযোগী মো. কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবির, মো. ফয়সাল এবং গুলিতে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নান। এছাড়া সীমান্তে অবৈধভাবে লোক পারাপারের সঙ্গে জড়িত সঞ্জয় চিসিম ও সিবিয়ন দিও এবং ফয়সালকে পালাতে সহায়তাকারী মো. নুরুজ্জামান নোমানীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলায় আরও দুই গাড়িচালককে সাক্ষী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, হাদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলাটি পরে হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। এজাহারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা ফয়সাল করিম মাসুদসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
ওসমান হাদি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়ে তিনি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের সূচনা করেন এবং ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন।
ঘটনার দিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেলে আসা এক সন্ত্রাসী হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকা হাদি ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হয়।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বরে তাকে দাফন করা হয়।