
বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা পাসপোর্ট বা অন্যান্য ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলেও শাস্তির মুখোমুখি হবেন না। ২০২৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ভারতের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী, তারা সেখানে অতিরিক্ত সময় অবস্থানের অনুমতি পাবেন বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাসপোর্ট বা ভ্রমণ অনুমোদনপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এমনকি যাদের ভ্রমণ নথির মেয়াদ ভারতে প্রবেশের পর শেষ হয়ে গেছে, তাদেরও এই নিয়মের আওতায় সুরক্ষা দেওয়া হবে।
সোমবার জারি হওয়া ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স (এক্সেম্পশন) অর্ডার, ২০২৫ অনুসারে, নেপাল ও ভুটানের নাগরিকরা এবং তিব্বতি শরণার্থীরাও ছাড় পাবেন। বিশেষ করে, যারা ১৯৫৯ সাল থেকে ২০০৩ সালের ৩০ মে’র মধ্যে কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতাবাস থেকে বিশেষ অনুমতিপত্র নিয়ে ভারতে এসে বিদেশি নিবন্ধন কর্মকর্তার কাছে নাম নিবন্ধন করেছেন, তারাও এই সুবিধা ভোগ করবেন।
তবে নেপাল ও ভুটানের নাগরিকরা যদি চীন, ম্যাকাও, হংকং বা পাকিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ বা প্রস্থান করেন, তাহলে তারা আইনের ধারা ২১-এর আওতায় অব্যাহতি পাবেন না। এই ধারা অনুসারে, বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
আইনের ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, অথচ তারা ভারতে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন, তাদের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ তিন লাখ রুপি জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনও দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালনের জন্য পরিবারের সঙ্গে ভারতে যাওয়া-আসা করলেও শাস্তির মুখে পড়বেন না। এছাড়া, বিদেশি কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা লাগবে না।
এই আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব ভারতের রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আইন ভঙ্গের জরিমানার হারও সোমবার নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আইনে বলা হয়েছে, যে কেউ বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলে এবং তারা আইনের আওতায় ছাড় না পেলে, তাদের ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ রুপি জরিমানা দিতে হবে।
তিব্বতি, মঙ্গোলিয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি ভিসাধারীদের জন্য অতিরিক্ত অবস্থানজনিত জরিমানা ধাপে ধাপে নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০ দিন পর্যন্ত অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য ফি নির্ধারিত হয়েছে ১০,০০০ রুপি। যদি অবস্থান ৩১ দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে হয়, তাহলে ফি হবে ২০,০০০ রুপি। ৯১ দিন থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত অবস্থানের ক্ষেত্রে ফি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫০,০০০ রুপি। যদি অবস্থান ১৮১ দিন থেকে এক বছরের মধ্যে হয়, তাহলে ফি হবে ১,০০,০০০ রুপি। এক বছরের বেশি অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য প্রতি অতিরিক্ত বছর ৫০,০০০ রুপি করে ফি ধার্য করা হবে, তবে মোট ফি সর্বোচ্চ ৩,০০,০০০ রুপি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি