
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেশে ফেরাতে আবারও ইন্টারপোলের সহায়তা চাইতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো এনসিবি। এবার চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে ট্রাইব্যুনালের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রায়ের কপি আনুষ্ঠানিকভাবে হাতে পেলেই চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর আগে ইন্টারপোলকে দুই দফা চিঠি পাঠানো হলেও সংস্থাটি রেড নোটিশ জারির যৌক্তিকতা পরিষ্কার করার জন্য ব্যাখ্যা চেয়েছিল।
গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিনটি অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও দুটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। রায় ঘোষণার সময় তারা কেউই দেশে ছিলেন না। ছাত্র ও জনতার বৈষম্যবিরোধী অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। একই সময়ে আশ্রয় নেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।
রায় কার্যকরের লক্ষ্যে এখন দুইজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পিআর এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, "শেখ হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা আগে থেকেই চলছিল। তখন মামলা বিচারাধীন থাকায় দণ্ডের বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। এখন রায় ঘোষণা হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের তথ্য যুক্ত করে নতুন করে চিঠি পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।"
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ভারত-বাংলাদেশ বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও এই চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরানো কঠিন হতে পারে। সে কারণে ইন্টারপোলের মাধ্যমে প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। একই সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পৃথকভাবে উদ্যোগ চালাচ্ছে।
রায় ঘোষণার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, "শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ইতিমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে; প্রয়োজনে আরও চিঠি দেওয়া হবে।"
পুলিশের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, পুরো প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি পদক্ষেপ হিসেবে এগোচ্ছে। তাদের মতে, আগের চিঠি পাঠানোর সময় শেখ হাসিনা শুধু পরোয়ানাভুক্ত ছিলেন, আর এখন তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত, যা ইন্টারপোলের নোটিশ জারির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।