
চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এ জোটকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো হুমকি হিসেবে দেখছেন না। তার দাবি, “আমাদের যতটা প্রয়োজন চীনের, তার চেয়ে অনেক বেশি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন তাদের।”
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, চীন-রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের ঘনিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৈশ্বিক কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। তিনি জানান, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার “ভালো সম্পর্ক” রয়েছে এবং আবারও জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের যতটা প্রয়োজন চীনের, তার চেয়ে অনেক বেশি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন তাদের।”
এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন বেইজিংয়ে “ভিক্টরি ডে” সামরিক কুচকাওয়াজে বিশ্বনেতাদের স্বাগত জানাতে যাচ্ছেন শি জিনপিং। কুচকাওয়াজে চীনের সামরিক শক্তিই হবে মূল আকর্ষণ, যেখানে অংশ নিচ্ছেন রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন। বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা বিশ্বের অবজ্ঞার জবাবে এই জোটবদ্ধ উপস্থিতি।
বিশ্ব বাণিজ্যে ট্রাম্পের শুল্কনীতি চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। জবাবে চীন কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা ভারসাম্য গড়ে তুলছে। তবে ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও স্বার্থ রক্ষায় এসব শুল্ক প্রয়োজনীয়, এমনকি এর জন্য কূটনৈতিক মূল্য দিতে হলেও তিনি প্রস্তুত।
বিবিসির এক প্রশ্নে, বেইজিং ও তার মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী জোট গড়ছে কিনা, ট্রাম্প বলেন, “না। একেবারেই না। আমাদেরকে প্রয়োজন চীনের।” আরও বলেন, “আমার শি’র সঙ্গে সম্পর্ক খুবই ভালো। তবে চীনকে আমাদের যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন তাদের। আমি এখানে কোনো সমস্যা দেখি না।”
মঙ্গলবার এক রেডিও সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও জানান, রাশিয়া ও চীনের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে তার কোনো উদ্বেগ নেই। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং “তারা কখনো আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করার কথা ভাববেও না।” তার ভাষায়, “বিশ্বাস করুন, এটি হবে তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ভুল।”
তবে একই সাক্ষাৎকারে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। গত মাসে আলাস্কায় তাদের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো শান্তিচুক্তি হয়নি। ট্রাম্প বলেন, “আমি পুতিনের প্রতি খুবই হতাশ। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের মানুষের জীবন রক্ষায় সবকিছু করবে।” তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু হয়। চীন এই আগ্রাসনের সরাসরি সমালোচনা করেনি। বরং পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, চীন দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য পণ্য সরবরাহ এবং রুশ জ্বালানি তেল কেনার মাধ্যমে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। বেইজিং অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়া সীমান্তের কিছু অংশে নতুন করে সেনা সমাবেশ করছে। রাতে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “(পুতিন) কোনোভাবেই শান্তি চুক্তিতে রাজি নন।”