
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। তদন্তে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি জানান, মামলায় সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং চারজনের বিরুদ্ধে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ রয়েছে মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন। তদন্ত সংস্থা তাদের সবাইকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছে।
অন্যদিকে, তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক, পলাশ সরদার ও সুজন সরকারের বিরুদ্ধে প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত মেহেদীর নেতৃত্বে একটি চক্র উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করত। তারা মেহেদীর কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করে উদ্যানে খুচরা বিক্রি করত এবং প্রতিদিন বিক্রির টাকা জমা দিত। কয়েকজন টাকা কম দেওয়ায় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও এফ রহমান হলের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য এবং তার বন্ধুরা উদ্যানে গাঁজা বিক্রিতে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে শত্রুতা গড়ে ওঠে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৩ মে রাত ১১টার দিকে সাম্য বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চ এলাকায় গেলে ‘কবুতর রাব্বি’ নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে ইলেকট্রিক ট্রেজারগান হাতে দেখেন। সাম্য তাকে থামানোর চেষ্টা করলে ধাওয়া-প্রতিধাওয়া হয় এবং গোল পুকুর এলাকার কাছে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় মেহেদী, রাব্বি, রিপন, পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ও রবিন সাম্যের ওপর হামলা চালায়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেহেদী সাম্যকে বুকে ঘুষি মারে এবং রাব্বি তার পায়ে সুইচ গিয়ার দিয়ে আঘাত করলে সাম্য গুরুতর আহত হন। বন্ধুদের রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত তামিম, সম্রাট ও পলাশ উদ্যানে ঘুরতে আসেন। তারা হামলাকারীদের থামানোর চেষ্টা করেন এবং আহত হন, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
সুজন সরকার নামের এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে ঘটনার পর সাম্যের মৃত্যু নিয়ে মন্তব্য করায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হন। তদন্তে তার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
মৃতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম ১৪ মে শাহবাগ থানায় ১০-১২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। পরে ডিবি পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।