
উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে প্রাণী ও গবাদিপশুর মধ্যে মাংসখেকো পরজীবীর সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। মেক্সিকোর সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট ৫ হাজার ৮৬টি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; যা জুলাইয়ের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেশি।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বুধবারের প্রতিবেদনে মেক্সিকোর সরকারি পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রাণী ও পশুর শরীরে ৬৪৯টি সক্রিয় সংক্রমণ ঘটছে।
দেশটির গবাদি পশু সংরক্ষণে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ইস্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নীল উইলকিন্স বলেন, “গবাদিপশু ও অন্যান্য প্রাণীর শরীরে মাংসখেকো পরজীবীর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার এই ঘটনা একেবারেই উদ্বেগজনক। এক মাসের ব্যবধানে সংক্রমণ ৫০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি, তা স্পষ্ট।”
মেক্সিকোর সংক্রমণের বেশিরভাগ ঘটনা গরুর মধ্যে দেখা গেলেও কুকুর, ঘোড়া ও ভেড়ার মধ্যেও এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এই পরজীবী উষ্ণ রক্তের প্রাণীর শরীরের মাংস খেয়ে ফেলে। এর পাশাপাশি গোচারণভূমি ধ্বংস ও বন্যপ্রাণীর জন্যও হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
২০২৩ সালে মধ্য-আমেরিকায় প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে মেক্সিকোতে স্ক্রুওয়ার্ম নামের এই মাংসখেকো পরজীবী ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেও সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মার্কিন খামারিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম গবাদি পশু উৎপাদনকারী রাজ্য টেক্সাসে সংক্রমণ ছড়ালে ক্ষতির পরিমাণ ১.৮ বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্ত্রী স্ক্রুওয়ার্ম মাছি উষ্ণ রক্তের প্রাণীর ক্ষতস্থানে শত শত ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে লার্ভা বের হওয়ার পর তা ধারালো মুখ দিয়ে তাজা মাংস খেতে শুরু করে। এতে প্রাণী ও পশুর শরীরে বড় ধরনের ক্ষত তৈরি হয় এবং চিকিৎসা না পেলে প্রাণী মারা যায়।
রয়টার্সের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে গত রোববার প্রথমবারের মতো মানবশরীরে এই পরজীবী শনাক্ত হয়েছে। মেরিল্যান্ড রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি মধ্য-আমেরিকার দেশ এল সালভাদর ভ্রমণ করেছিলেন। সিডিসি কয়েক সপ্তাহ আগে আরও এক রোগী শনাক্ত করেছে, যিনি গুয়েতেমালায় ভ্রমণকালে সংক্রমিত হয়েছেন। সিডিসি ৪ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে মানবশরীরে সংক্রমণ নিশ্চিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মেক্সিকোতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। তারা যাচাই করবে, মেক্সিকো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে কি না।
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি