
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “বিএনপি নির্বাচিত হলে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করবে।”
সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ গণতন্ত্রের রেল লাইনে ফিরে না আসে, ততক্ষণ বিএনপির আন্দোলন চলবে।”
তারেক রহমান বলেন, “আমাদের দ্বিতীয় শপথ - ৩১ দফার আলোকে এই বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করতে জীবন বাজি রেখে কাজ করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “দেশে জবাবদিহিতার সকল ব্যবস্থা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস করা হয়েছিল। গুম, খুন, ও হত্যার রাজনীতি হয়েছে। ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ছিল জনগণের আশার প্রতীক, কিন্তু গণতন্ত্রকে দমন করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। যারা স্বৈরাচারী শাসক ছিল তারা গুম, খুন, মিথ্যা মামলা এবং লুটপাটের রাজনীতি করেছে। মেগা প্রকল্পের আড়ালে মেগা দুর্নীতিও করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “গত ১৬ বছরে আমরা রাজপথে অনেক রক্ত ঝরতে দেখেছি। জুলাই আন্দোলনে মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে, নারীদের নির্যাতন করা হয়েছে, এমনকি শিশুরাও হেলিকপ্টারের গুলি থেকে রক্ষা পায়নি। তবে শেষপর্যন্ত জনগণের বিজয় হয়েছে, স্বৈরাচার পরাজিত হয়েছে এবং দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের মানুষের আত্মত্যাগেই বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।”
তারেক রহমান জানান, “বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, কৃষি এবং কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে সুনির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করে। আমি বিশ্বাস করি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোরও নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে। মতপার্থক্য থাকতেই পারে, তবে দেশের অগ্রগতির জন্য সবাইকে পরিকল্পনা নিতে হবে। ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে, কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং বেকার সমস্যা দূর করতে হবে। নারীদের সমস্যা সমাধানে দিকনির্দেশনা দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “বক্তব্য দেওয়ার অধিকার সকলের আছে, তবে কোনো বক্তব্য দেশের পরিস্থিতি অস্থির করে তুললে এবং স্বৈরাচারী পরিবেশ তৈরি হলে, তা দেশের জন্য শুভ নয়।”
তিনি বলেন, “বিএনপির সম্মেলনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। জনগণ প্রত্যাশা করে রাজনৈতিক দলগুলো মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। জনগণই ঠিক করবে কে আগামী দিনে দেশের দায়িত্ব নেবে।”
তারেক রহমান আরও বলেন, “যদি আমরা জনগণকে উপেক্ষা করে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে থাকি, তবে দেশের জন্য অশুভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, যা জনগণ চায় না। জনগণ যাকে চাইবে, তারাই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবে।”
তিনি বলেন, “যদি আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাই, তবে ৩১ দফার মাধ্যমে দেওয়া রূপরেখা অনুযায়ী কাজ করব। জনগণের ওপর বিশ্বাস থাকলে, তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন।” তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপিকে সমর্থন জানাতে আহ্বান জানান, যেন প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়া যায়।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বক্তব্য দেন সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনের প্রথমার্ধে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সহসভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর করিম। দ্বিতীয়ার্ধে সভাপতিত্ব করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মির্জা ফয়সল আমিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মো. পয়গাম আলী।