
ভারতের আসামের কাছাড় জেলার কালাইন এলাকায় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) চার জওয়ানের বিরুদ্ধে মানসিক প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা নিয়েছে পুলিশ। মৃত ব্যক্তির নাম নির্মল নমঃশূদ্র (৪৫)। পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে বিএসএফ জওয়ানরা নির্মলকে ধরে নিয়ে যায় এবং শারীরিক নির্যাতন চালায়।
শনিবার সকালে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে কালাইন এবং কাটিগড়া এলাকা। রোববার ও সোমবার বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদসভায় ফেটে পড়ে জনরোষ।
প্রথমে পরিবারের সদস্যরা নির্মলের মরদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে এবং তদন্তের আশ্বাস পেয়ে মৃতদেহ গ্রহণে রাজি হন তারা।
সোমবার নির্মলের ভাই শ্রীমত নমঃশূদ্র কাটিগড়া থানায় চারজন বিএসএফ জওয়ানের নাম উল্লেখ করে এফআইআর দায়ের করেন। তিনি জানান, “নির্মল মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন, কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বিবাহিত ছিলেন না, আমার সঙ্গেই থাকতেন।”
ডয়চে ভেলেকে শ্রীমত বলেন, “সেদিন রাতে খুব বেশি গরম পড়েছিল। আলো না থাকায় অস্বস্তি বোধ করছিলেন নির্মল। সাড়ে এগারোটার দিকে তিনি বাইরে একটু হাওয়া খেতে বেরিয়ে যান। আমি নিজেও অসুস্থ, তাই তাকে আটকাতে পারিনি। আধঘণ্টা পরে তার চিৎকার শুনতে পাই। পরে স্থানীয়রা জানাযন বিএসএফ জওয়ানেরা তাকে ধরে নিয়ে গেছে।”
পুলিশে জমা দেওয়া অভিযোগে শ্রীমত দাবি করেছেন, বিএসএফ জওয়ানরা নির্মলকে গাড়িতে তুলতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেয়। কিন্তু জওয়ানরা বন্দুক দেখিয়ে সবাইকে হুমকি দেন। তিনি বলেন, “বিএসএফ গ্রামবাসীদের গালি দেয় এবং বন্দুক দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। সশস্ত্র বিএসএফ-এর সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করা সহজ ছিল না। তাই স্থানীয়রা কিছু করতে পারেননি।”
নির্মলের ভাবি সতী নমঃশূদ্র জানান, খবর পেয়ে তিনি দ্রুত কালাইন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে নির্মলকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তার মাথায় ছিল গভীর আঘাত।
সতী বলেন, “বিএসএফ-এর জওয়ানরাই নির্মলকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলেন। চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগে চিকিৎসকেরা যখন পুলিশে জানানোর কথা বলেন, তখন জওয়ানরা সরে পড়েন।” পরে নির্মলকে শিলচর মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়, কিন্তু পরদিন সকাল সাড়ে ৯টায় তার মৃত্যু হয়।
রবিবার ও সোমবার কালাইন-কাটিগড়া এলাকায় প্রতিবাদসভা হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বিএসএফ বারবার নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার চালায়। এক প্রতিবাদকারী বলেন, “বিএসএফ চোরাচালান এবং অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ করতে পারে না, নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার চালায়।”
বিএসএফ-এর মিজোরাম ও কাছাড় সীমান্তের ডিআইজি আহসান শাহেদি জানান, “আমাদের টহলরত দল নির্মলকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। রাতের অন্ধকারে মদ্যপ অবস্থায় রাস্তার ধারে পাওয়া গিয়েছিল তাকে। তিনি গুরুতর ভাবে আহতও ছিলেন। আমাদের দল তাকে তড়িঘড়ি স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং পরে তার পরিবারকে শিলচরে পাঠাতেও সাহায্য করে। নির্যাতনের অভিযোগ ভিত্তিহীন, তবে আমরা অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছি।”
তিনি আরও জানান, একজন ডিআইজি এবং একজন চিকিৎসক নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। “যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার নুমাল মাহাত্মা জানান, “পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। পরিবার বলছে বিএসএফ নির্মলকে মারধর করেছে, আবার বিএসএফ দাবি করছে তারা মদ্যপ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেছিল। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে।”