
বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থাকে ‘জগাখিচুড়ি’ আখ্যা দিয়ে সংখ্যানুপাতিক ভোটের ধারণাকে সরাসরি খারিজ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি দেশের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং সাধারণ মানুষ এর অর্থই বোঝে না।
শনিবার (২৬ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জিয়া পরিষদের আয়োজনে “ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতন ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন একটা জগাখিচুড়ি ঘটনা চলছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন এবং যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই।”
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (পিআর) নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যেমন জোর গলায় বলছে যে, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে (পিআর পদ্ধতির) নির্বাচন। আমাদের সাধারণ মানুষ তো বুঝেই না যে, আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা (জনগণ) জানে যে, একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কলাপাতা; যাই হোক সেখানে গিয়ে সে ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন ওনারা বলতে শুরু করেছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন তারা বলতে পারবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি কিছুটা বোঝার চেষ্টা করি তাতে করে ভোট হবে, জনগণ ভোট দেবে… যে দলটি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে তারা তাদের নমিনেশন দেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য। আমরা এই কারণেই বলেছি যে, নিম্নকক্ষের যে পার্লামেন্ট সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।”
নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফখরুল বলেন, “বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন কেন চায় সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না। নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করবো কী করে? আর প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে? আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থেকে?”
সরকার পরিচালনার বর্তমান চিত্র নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। “কয়েকজন ব্যক্তিকে দেশ-বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কী দেশ চালানো যায়? যায় না। এই যে সহজ সরল কথা আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।”
প্রশাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের যে আমলাতন্ত্র এই আমলাতন্ত্র, এটা আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা...ইটস এ নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজেটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার, অর্থাৎ মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সেই বিষয়গুলো করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কাছে চলে যাওয়া…জনগণের কাছ থেকে তাদের কী প্রয়োজন তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সেটাকে নিয়ে এসে দেশ পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। বক্তৃতা দেন জিয়া পরিষদের অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক মজিবুর রহমান হাওলাদার, আবদুল্লাহ হিল মাসুদ, খন্দোকার শফিকুল হাসান, আলী নূর রহমান, এম জাহীর আলী, মনোয়ার হোসেন এনাম ও রুহুল আলম।