
প্রায় আড়াই শতাধিক প্রাণহানির পর সহিংসতায় বিধ্বস্ত মণিপুরে প্রথমবারের মতো পা রাখলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার রাজ্যটির চুরাচাঁদপুরে এক জনসভায় তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, "আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। ভারত সরকার মণিপুরের মানুষের পাশে আছে।"
দীর্ঘ দু’বছরের সহিংসতা ও অস্থিরতার পর এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখে।
বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা আসাম ও মণিপুর সফরের অংশ হিসেবে শনিবার মণিপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী মোদি। সফরের শেষ পর্বে তিনি যাবেন বিহার রাজ্যে, যেখানে আগামী অক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিহার ভারতের তৃতীয় সর্বাধিক জনসংখ্যাবহুল রাজ্য, যেখানে বসবাস করে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ। হিন্দিভাষী উত্তর ভারতের মধ্যে বিজেপি এখনো এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি এই রাজ্যেই। তাই আসন্ন নির্বাচনের আগে মোদির সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সফরের অংশ হিসেবে বিহারে প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদির। এই বিনিয়োগের আওতায় থাকবে কৃষি খাতের উন্নয়ন, রেল ও সড়ক অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং একটি আধুনিক বিমানবন্দর টার্মিনালের নির্মাণ।
২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নেয়। হিন্দু মেইতেই ও খ্রিস্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ। বাস্তুচ্যুত হন হাজার হাজার বাসিন্দা, যাদের অনেকে এখনো অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন।
চুরাচাঁদপুরের সমাবেশে মোদি বলেন, “মণিপুরে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ভারত সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আজ আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।”
তিনি আরও বলেন, “রাজ্যের সব জনগোষ্ঠীকে একসঙ্গে শান্তিপূর্ণ পথ বেছে নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের দিকে এগোতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদির মেইতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজধানী শহর ইমফলেও একটি বড় জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে তিনি মণিপুর সফর করেছিলেন ২০২২ সালে। রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে প্রায় ১,৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই রাজ্য মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত।
সফরের প্রথম দিনেই মোদি উদ্বোধন করেন ৯৬ কোটি মার্কিন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যে নির্মিত হবে পাঁচটি নতুন মহাসড়ক ও একটি আধুনিক পুলিশ সদর দপ্তর।
গত ফেব্রুয়ারিতে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন মণিপুরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা এন বীরেন সিং। এরপর থেকেই প্রায় ৩০ লাখ মানুষের এই রাজ্যটি কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলছে।
মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই ভূমির মালিকানা এবং সরকারি চাকরির কোটাকে ঘিরে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। মানবাধিকারকর্মীরা অভিযোগ করছেন, রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে এই বিভাজনকে আরও উসকে দিচ্ছেন।
সূত্র: রয়টার্স