
১১ আগস্ট সকাল থেকেই দিল্লির রাজনীতির মঞ্চে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সাংসদরা সংসদ ভবনের মকর দ্বার থেকে একটি সংগঠিত পদযাত্রা শুরু করেন, যার লক্ষ্য ছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়। তাদের প্রতিবাদ ছিল বিতর্কিত 'বিশেষ নিবিড় সংশোধন' (SIR) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে—বিরোধীদের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে বিহারসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভোটার তালিকা থেকে বিরোধী সমর্থকদের নাম মুছে ফেলা হচ্ছে।
মিছিলে সামনের সারিতে ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, কংগ্রেসের শশী থারুরসহ ৩০-এরও বেশি সাংসদ। তবে যাত্রাপথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দিল্লি পুলিশ। সংসদ ভবনের কাছেই ব্যারিকেড বসিয়ে মিছিল থামানোর চেষ্টা করা হয়। এই সময় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সহকর্মীদের সহায়তায় সেখানেই সামলানো হয়। সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব ব্যারিকেড টপকে এগিয়ে যান—সেই দৃশ্য মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এর পরপরই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ ৩০-এর বেশি সাংসদকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায়। খবরটি সামনে আসতেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তবে কিছু ঘণ্টার মধ্যেই তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মুক্তির পর সংসদে ফিরে সাংবাদিকদের সামনে রাহুল গান্ধী বলেন, “ভারতের গণতন্ত্রের অবস্থা দেখুন—৩০০ সাংসদ নির্বাচন কমিশনে নথি জমা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু ভয় পেয়ে আমাদের আটক করা হয়েছে। এটা আর রাজনৈতিক লড়াই নয়, এটা সংবিধানের লড়াই।” তিনি আরও বলেন, “সত্য বলার জন্য শপথপত্র লাগে না”—এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি নির্বাচন কমিশনের দাবিকৃত শপথপত্রে সই না করার বার্তাই দেন।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা অশোক গেহলটও এই শপথপত্রের বিষয়টিকে “অযৌক্তিক” আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, অখিলেশ যাদব সরাসরি অভিযোগ করেন—ভোটার তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার এই চক্রান্ত আসলে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “বিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে এই আটক—কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাব না।”
‘ইন্ডিয়া’ জোটের দাবি, SIR প্রক্রিয়া একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট শ্রেণির ভোটারদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশন এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, বিরোধী জোট জানিয়ে দিয়েছে—তারা রাজপথে হোক বা সংসদে, এই লড়াই চালিয়ে যাবে।
১১ আগস্টের এই নাটকীয় ঘটনা শেষ হলেও তার প্রতিধ্বনি ভারতের রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার, মুক্তি এবং সংসদে রাহুল গান্ধীর জোরালো বার্তা—সব মিলিয়ে বিরোধী জোটের প্রতিবাদ নতুন গতি পেয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাহুল গান্ধীর এই অবস্থান বিরোধী শিবিরে আরও সাহস ও উদ্দীপনা যোগাবে।