
২০২৬ সাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জন্য রোমাঞ্চকর হলেও সব দিক থেকে স্বস্তি আনতে নাও পারে। বড় প্রযুক্তি কোম্পানিতে অভ্যন্তরীণ চাপ, বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রভাব, কর্মক্ষেত্রে নজরদারি এবং রোবটের বাস্তব জীবনে প্রবেশ- এসব মিলিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে একাধিক চ্যালেঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি ম্যাগাজিন ওয়্যার্ড এক বিশ্লেষণে আগামী বছরের জন্য এআই খাতে ছয়টি ‘ভয়ংকর’ সম্ভাবনা তুলে ধরেছে।
১. বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা
এই মাসে ওপেনএআই প্রতিদ্বন্দ্বিতা জোরদার করতে ‘কোড রেড’ ঘোষণা করেছে। তিন বছর আগে গুগলের বড় ছাঁটাইয়ের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে—যখন প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত হিসেবে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই করেছিল। ওয়্যার্ডের প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ২০২৬ সালের শুরুতে কি ওপেনএআইও এমন পথ অনুসরণ করবে?
২. ডেটা সেন্টার ঘিরে গুজব
বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টার নির্মাণের বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেক নাগরিক সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলন করছেন। র্যান্ড করপোরেশনের গবেষক অস্টিন ওয়াং বলেছেন, “বর্তমানে এসব আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব মার্কিন নাগরিকরাই দিচ্ছেন। তবে বিদেশি হস্তক্ষেপের ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।” এআই দিয়ে ছবি ও ভিডিও তৈরি সহজ হওয়ায় গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৩. প্রযুক্তি মেলায় রোবটের আধিপত্য
২০২৬ সালে সিইএসসহ বড় প্রযুক্তি সম্মেলনগুলোতে এআইচালিত রোবটের ভূমিকা বাড়বে। গুগল সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে রোবট মুখে বলা নির্দেশ শুনে আবর্জনা আলাদা করছে। জেনারেল মোটর্সের সাবেক এআই কর্মকর্তা বারাক তুরোভস্কি বলেন, “বড় ভাষা মডেলের পরের সীমান্ত হলো বাস্তব জীবন।”
৪. কর্মক্ষেত্রে নজরদারি ও এআই প্রশিক্ষণ
অনেক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে কর্মীদের কম্পিউটারে নজরদারি সফটওয়্যার বসিয়েছে। ২০২৬ সালে এই নজরদারি আরও গভীর হতে পারে। কর্মীদের ক্লিক, স্ক্রল এবং টাইপিং ট্র্যাক করে এআই এজেন্ট প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে। কর্মী অধিকারকর্মী উইলনেইডা নেগ্রন জানিয়েছেন, এতে চাকরি হারানোর ভয় বাড়বে এবং ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি তৈরি হবে।
৫. সবসময় শোনা ডিভাইস ও আইনি ঝুঁকি
ভিডিও কল বা মিটিং শুনে নোট বানানো এআই টুল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রানোলা নামের একটি টুল স্থায়ীভাবে অডিও সংরক্ষণ না করেই সারাংশ তৈরি করতে পারে। তবে অংশগ্রহণকারীদের অবহিত না করে এই টুল ব্যবহার করা হলে আইনগত প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। ২০২৬ সালে এ ধরনের ডেটা ফাঁস বা মামলা দেখা দিতে পারে।
৬. রোবট্যাক্সি এবং দায়বোধ
২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রোবট্যাক্সি পরিষেবা দ্রুত সম্প্রসারিত হবে। ওয়েইমো সপ্তাহে ১০ লাখ রাইড দেওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং ২৫টি শহরে সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্য রাখছে। তবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মানুষই দায়ী।
সব মিলিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে-২০২৬ সালে এআই কি জীবন সহজ করবে, নাকি নতুন ভয় ও চ্যালেঞ্জ যোগ করবে? সময়ই তার উত্তর দেবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, আগামি বছর এআই সংক্রান্ত বড় বিতর্ক ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বছর হিসেবে মনে রাখার মতো হবে।