
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু হলেও সাধারণ গ্রাহক এখনো টাকা তুলতে পারছেন না। পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে গঠিত নতুন এই প্রতিষ্ঠানের শাখাগুলোতে আগের দিনের ভিড় আর নেই, বরং ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ ও হতাশা। বহুবার চেষ্টা করেও টাকা তুলতে না পারায় অনেকে শাখায় যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। এর সঙ্গে সরকারের বরাদ্দ করা অর্থ এখনো শাখায় না পৌঁছানোয় আমানতকারীদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শাখাগুলো ঘুরে দেখা গেছে যে, সব ব্যাংক অতীতে গ্রাহকে সরগরম থাকত, এখন সেখানে হাতে গোনা দু-একজন গ্রাহকই দেখা যায়।
বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নয়া পল্টন শাখায় গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারে কোনো গ্রাহক নেই। প্রায় এক ঘণ্টা পর দেখা মিলল মাত্র দুইজনের, দু’জনই এসেছেন তাদের মাসিক ডিপিএস জমা দিতে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য শাখাগুলোতেও একই চিত্র। এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক পলাশ বলেন, “আমার পাঁচ বছর মেয়াদী ডিপিএস আছে। অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন শুনেছি। কিন্তু এখন ব্যাংক সরকারি মালিকানায় গেছে, তাই বিশ্বাস করি- সরকারই আমাদের টাকা ফেরত দেবে। তাছাড়া এখন ডিপিএস ভাঙলে ঘোষিত প্যাকেজের সুবিধাও পাব না।”
একসময় গ্রাহকের ভিড়ে ব্যস্ত থাকা এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখাও এখন প্রায় ফাঁকা। শাখার এক কর্মকর্তা জানান, “উপর থেকে নির্দেশনা না থাকায় গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারছি না।”
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এক শাখা ব্যবস্থাপক তৌফিক বলেন, “জেনেছি বাজেট থেকে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। তবে সেগুলো এখনো শাখায় আসেনি। লিখিত নির্দেশনা ছাড়া আমরা গ্রাহকদের টাকা দিতে পারব না।”
এদিকে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রথম কাজ- এ মন্তব্য করেছেন নতুন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। মঙ্গলবার গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, “সরকারি মালিকানায় একটি ইসলামী ব্যাংক চালু হওয়া দেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা। ব্যাংকটিকে পূর্ণাঙ্গভাবে দাঁড় করাতে বেশ কিছু কারিগরি দল কাজ করছে। আমরা প্রথমেই আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই।” তিনি আরও জানান, পাঁচ ব্যাংক'কে আইনগতভাবে সম্পূর্ণ একীভূত করা এবং ব্যাংকের ভিশন-মিশন চূড়ান্ত করাই এখন প্রধান অগ্রাধিকার।
পাঁচটি ব্যাংক- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত হয়েছে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। নতুন ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ২০ হাজার কোটি দিচ্ছে সরকার এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে, বরাদ্দ করা ২০ হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের হিসাবেও জমা হয়েছে। তবে এই অর্থ শাখা পর্যায়ে কবে পৌঁছাবে- তা স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন গঠনে এখনো সরকার কোনো অর্থ ছাড় করেনি। প্রাথমিকভাবে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও দ্রুত অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।” এতে অংশী ব্যাংক এবং আমানতকারীদের আস্থা দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, “প্রতিশ্রুত সহায়তাগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।”