
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনি বলেছেন, পুঁজিবাদ যেখানে নারীর মর্যাদাকে পদদলিত করে, সেখানে ইসলাম নারীর প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শনের ওপর গুরুত্বারোপ করে। ইসলামে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ এবং সম্মানজনক, আর কুরআনই নারীর পরিচয় ও ব্যক্তিত্বের সর্বোচ্চ নির্দেশনা দেয়।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) তেহরানে অনুষ্ঠিত নারী ও কন্যা সমাবেশে খামেনি এই মন্তব্য করেন। তিনি ঘরে এবং সমাজে নারীর মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন এবং স্ত্রী ও নারীর প্রতি স্বামী ও পুরুষের আচরণের সঠিক দিকনির্দেশনা দেন।
খামেনি হজরত ফাতিমা জাহরা (রা.)-এর উদাহরণ দিয়ে বলেন, ইবাদত ও বিনয়, মানুষের জন্য ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গ, দুর্দশা ও বিপদে ধৈর্য, নির্যাতিতের অধিকার রক্ষা, সমাজকে সত্যের পথে আলোকিত করা, রাজনৈতিক সচেতনতা, ঘর সামলানো, দাম্পত্য জীবন পরিচালনা, সন্তান লালন-পালন এবং ইসলামি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোতে সক্রিয় উপস্থিতি- এই গুণাবলীর মাধ্যমে নারী কীর্তি দেখিয়েছেন।
তিনি কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নারী ও পুরুষ সমানভাবে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ এবং মর্যাদা অর্জনে সক্ষম। কিন্তু যারা ধর্ম মানে অথচ তা সঠিকভাবে বোঝে না অথবা ধর্মকে স্বীকারই করে না, তাদের উপলব্ধি এই সত্যের বিপরীত।
খামেনি আরও বলেন, ইসলামে নারী-পুরুষ সমান অধিকার ভোগ করে সামাজিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনৈতিক দায়িত্ব এবং সরকারি পদে। পাশাপাশি আধ্যাত্মিক ও সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেও সমান সুযোগ রয়েছে।
তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতি ও পুঁজিবাদকে সমালোচনা করে বলেন, ইসলাম নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, হিজাব, বিবাহ ও পোশাকের মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করে, যা নারীর প্রকৃতি ও কল্যাণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে, পশ্চিমা সংস্কৃতিতে যৌন আকাঙ্ক্ষার সীমাহীনতা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কোনো গুরুত্ব নেই।
খামেনি বলেন, নারী ও পুরুষের মধ্যে দেহ-প্রকৃতি ও স্বভাবগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ইসলাম তাদের পরিপূরক ও ভারসাম্যপূর্ণ হিসেবে দেখেছে। এই ভারসাম্য মানবসমাজ পরিচালনা, সভ্যতার অগ্রগতি এবং পরিবারের স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি পরিবার গঠনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, পশ্চিমা সংস্কৃতিতে পরিবারকে প্রায় ভুলে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু ইসলামে নারী, পুরুষ ও সন্তানের পারস্পরিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীর মৌলিক অধিকার হলো সামাজিক ও পারিবারিক ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা।
খামেনি কুরআনে হজরত মরিয়ম ও হজরত আসিয়ার উদাহরণ তুলে ধরেন, যা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য মানদণ্ড হিসেবে গণ্য। তিনি বলেন, নারীর সামাজিক অধিকার যেমন সমান মজুরি, কর্মজীবী বা পরিবারের একক অভিভাবক হিসেবে সুবিধা এবং বিশেষ ছুটি- এসব নিশ্চিত করতে হবে, কোনো বৈষম্য করা যাবে না।
তিনি ঘরে নারীর প্রধান অধিকার হিসেবে স্বামীর ভালোবাসা এবং সহিংসতা থেকে মুক্ত থাকা উল্লেখ করেন। পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রায়শই নারীর প্রতি সহিংসতা ও হত্যা হয়, যা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।