
তফসিল ঘোষণার কাউন্টডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতে এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ঘিরে সব আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি এখন নির্বাচন কমিশনের টেবিলে।
এ এম এম নাছিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আগামী রবিবার ৭ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার লক্ষ্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবে। ওই বৈঠকেই ভোটের দিন-তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। এর আগে ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবে কমিশন এবং ১১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করবেন।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, “আগামী রবিবার তপশিল ঘোষণার উদ্দেশ্যে কমিশনের সভা আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি ঐ দিনের বৈঠকে আমরা সবকিছুই চূড়ান্ত করতে পারব।”
এদিকে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “পুরো জাতি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। ভোট বঞ্চিত জনগণ ভোট দিতে প্রস্তুত। আশা করছি ইসির ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই তপশিল ঘোষণা করবে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের দাঁড়ায় যাবে। উৎসব আমেজে দেশে ভোট হবে।”
ইসির কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্যও পথ খোলা রয়েছে। তবে বড় দলের প্রতীক নিয়ে ছোট দলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। এবার একাধিক নির্বাচনজোট গঠনের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোট থাকায় ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে মোট ৯ ঘণ্টা করার পরিকল্পনা করছে কমিশন। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট হতে পারে। দুটি নির্বাচনের জন্য দুটি আলাদা ব্যালট রাখা হবে, গণভোটে ব্যবহৃত হবে রঙিন ব্যালট। একটি কেন্দ্রেই দুটি গোপন ভোটকক্ষ রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। দুটি ভোট একসঙ্গে হওয়ায় ব্যবস্থাপনাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হবে এবং পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে।
এদিকে তফসিলের আগেই বেশিরভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে গণভোট সংযুক্ত করা হয়েছে; রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ শেষ হয়েছে। সংশোধন করা হয়েছে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি। ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশের ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩। আজকের মধ্যেই এর মুদ্রণ শেষ হবে। পুরো দেশে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। অমোচনীয় কালি থেকে শুরু করে ২৭ ধরনের নির্বাচনি সরঞ্জাম সংগ্রহ করে গুদামে রাখা হয়েছে। কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের শেষ ধাপ চলছে। ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণও শেষ হয়েছে, যদিও বাগেরহাটের সীমানা নিয়ে আদালতের রায় রয়েছে।
তিনটি বিতর্কিত দলীয় সরকারের নির্বাচনের পর এবার অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ভোট হওয়ায় মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ডিসি, ইউএনও এবং লটারির মাধ্যমে ৬৪ জেলার এসপি ও ৫২৭ থানার ওসি বদলি করা হয়েছে।
১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়ে কমিশন ইতোমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ্দিন বলেন, আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী অনুমোদন হয়েছে, প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পরই তফসিল ঘোষণা করা হবে।
ভোটের সম্ভাব্য সময়ও ইসির পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। তার ভাষায়, “৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এক-দুদিন পরে কিংবা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এক-দুদিন আগেও হতে পারে।” তিনি ইঙ্গিত দেন, ওই সময়সীমার মধ্যে মঙ্গলবার দিনটিই সম্ভাব্য হতে পারে।
আগামী রবিবার কমিশন সভায় এ সংক্রান্ত সব তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তফসিল ঘোষণাও সেদিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১ ডিসেম্বরের দিকে হতে পারে।
দুটি নির্বাচনের কারণে ভোটগ্রহণ সময় ও বুথ বাড়ানোর বিষয়েও ভাবছে ইসি। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখন সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হলেও সেটি এগিয়ে সাড়ে ৭টায় শুরু এবং বিকাল ৪টার সময় বাড়িয়ে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হতে পারে।