
যে একতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, সেই একতার ‘অবমাননা’ হতে পারে ভেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘এককভাব’ জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে নিষেধ করা হয়েছিল বলে জানালেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রস্তুতির অংশ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি এ কথা জানান।
মুহম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মাঝে এক দিন ছাত্ররা এসে বলল যে, তারা একটা ঘোষণা দেবে। প্রক্লেমেশন করবে। আমাকেও সেখানে থাকতে হবে। আমি বুঝতে চাইলাম কী প্রোক্লেমেশন দিচ্ছে। তারা আমাকে বলল। আমি বললাম, এটা হবে না। এটা আমার চাওয়াটাও ঠিক হবে না, তোমাদেরও করাটা ঠিক হবে না।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি তখন বলেছিলেন, ‘তোমরা যদি ৫ আগসস্ট ফিরে যেতে চাও, তাহলে সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতে যা হয়েছিল, সেটা রিক্রিয়েট করতে হবে। এটা একা করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘ওই দিনের (৫ অগাস্ট) পুরো অনুভূতিই ছিল এক হওয়ার অনুভূতি। কেউ বলে নাই, তুমি অমুক, তুমি তমুক।’
‘কাজেই তোমরা যদি করতে চাও, সবাইকে নিয়ে করতে হবে; এটা স্পষ্ট। এটা ছাড়া করাটা ঠিক হবে না। যে একতা দিয়ে তোমরা ৫ অগাস্ট সৃষ্টি করেছিলে, সেটার অবমাননা হবে।’
ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান নিয়ে ঘোষণাপত্র তৈরির অংশ হিসেবে সর্বদলীয় এ বৈঠক আয়োজনের কথা মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জানিয়েছিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা দেরিতে পৌঁছানোয় তা শুরু হয় বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বৈঠকস্থলে উপস্থিত হন বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বরাবরের মত অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংলাপে ডাক পায়নি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গত ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচিও দেয় তারা। এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মত অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।’
প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে সরকারের তরফ থেকেই ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হয়।