
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরআজমপুর ও ছাতিয়ারগাতী এলাকায় নির্মাণাধীন মধুমতি নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ধসে পড়ায় নদী ভাঙনের ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। ৫০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে নদী ভাঙনের হাত থেকে ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তা ও সরকারি স্থাপনা রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি ছিল, কিন্তু বাঁধ শেষ হওয়ার আগেই বিলীন হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় শতাধিক পরিবার চরম আতঙ্কে রয়েছে।
২০২৩ সালের ৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মধুমতির অব্যাহত ভাঙন রোধের লক্ষ্যে সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এর আওতায় চরআজমপুরে ৩০০ মিটার বাঁধের নির্মাণকাজ পেয়েছিল ‘লিটন মল্লিক’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যার কাজের মূল্য ধরা হয়েছিল ১২ কোটি টাকা। কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে, জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হস্তান্তরের আগেই বাঁধ ধসে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প নকশা অনুযায়ী নদীর পানি স্তর অনুযায়ী অন্তত ৩৫ মিটার গভীর পর্যন্ত কাটিং করে জিও ব্যাগ বসানো ও যথেষ্ট বালু ভরে সিসি ব্লক বসানোর কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। বরং অল্প পরিমাণ মাটি কাটাছেঁড়া করে শুধুমাত্র সামান্য ডাম্পিং করা হয়েছে। জিও ব্যাগের মান ও বালুর পরিমাণ যথাযথ ছিল না, ফলে নদীর প্রবল স্রোতে ব্যাগ ছিঁড়ে গিয়ে বাঁধ ধসে পড়ে।
এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এই অবহেলা প্রকল্পের পুরো কাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রকল্পের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল প্রয়াত নৌবাহিনী কর্মকর্তা নকীব হোসেনের নকীব গ্রুপ ও ওয়েস্টার্ন গ্রুপ, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তারা কার্যকর উপস্থিতি দেখায়নি। প্যাকেজভিত্তিক কাজ অন্তত ২৩ জন সাব-ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেকেই অভিজ্ঞতা ছাড়াই কাজ শুরু করেছেন। ফলে কাজের গতি ধীর এবং গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
চরআজমপুরের হান্নান শরীফ (৬২) বলেন, “বাঁধ হলে নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাবো ভেবেছিলাম, কিন্তু কাজ শেষ না হতেই ধসে পড়েছে। মানেই কাজ ছিল নিম্নমানের।” একই এলাকার বাসিন্দা শেফালী বেগম (৫৫) বলেন, “দুই মাস আগে ধার নিয়ে বাঁধের পাশে ঘর বানিয়েছি, এখন বাঁধ নেই, ঘর যাবে, আমরা কোথায় যাব?”
টগরবন্দ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শাহীন শেখ জানান, “কাজ শেষ হলেও এখনও পাউবোতে হস্তান্তর হয়নি। দ্রুত মেরামত না হলে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে থাকবে।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, “অতিরিক্ত স্রোতের কারণে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, পানি কমলে ব্লক বসিয়ে মেরামত করব।”
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং ঠিকাদারকে ধসে যাওয়া অংশ পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছি। ওই প্যাকেজের কাজ অন্যান্য প্যাকেজের তুলনায় ভালো হয়েছে, ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয়।” তবে তিনি স্বীকার করেছেন, স্রোতধারার পরিবর্তনই বাঁধ ধসের মূল কারণ।