
চলতি বছরের মধ্যে জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রেকর্ড হয়েছে। এই এক মাসেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ হাজার ৪০৬ জন, যা জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১০ হাজার ২৬৯ জন। আর শুধুমাত্র জুলাই মাসেই তা ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩৮৬ জন রোগী এবং এ সময় দুজন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মারা যাওয়া দুজনই পুরুষ এবং তারা ঢাকার দুইটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে মোট ৮১ জনের— যাদের মধ্যে ৪৬ জন পুরুষ ও ৩৫ জন নারী।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগভিত্তিক রোগী ভর্তির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বরিশালে সর্বোচ্চ ১০৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরপর রয়েছে ঢাকা মহানগর ৭৮, চট্টগ্রাম বিভাগ ৬৪, ঢাকার বাইরের জেলা ৬২, রাজশাহী বিভাগ ৪৫, খুলনা ২৩, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচ এবং রংপুর বিভাগে তিনজন।
চলতি বছরে জুলাই মাসেই ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে— ৩৯ জন। জুনে মারা যান ১৯ জন, জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে সাত এবং মে মাসে মারা গেছেন তিনজন।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে— ৪৬ জন। যেসব রোগী ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন, তাদেরই এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ১৬ জনের।
রোগী ভর্তির সংখ্যায়ও জুলাই মাস এগিয়ে। এই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ হাজার ৪০৬ জন। অন্যদিকে জুনে ছিল ৫,৯৫১, জানুয়ারিতে ১,১৬১, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬, এপ্রিলে ৭০১ এবং মে মাসে ভর্তি হয়েছিলেন ১,৭৭৭ জন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ শুরু হলেও এত দিনে এটি নিয়ন্ত্রণে না আসার প্রধান কারণ হলো, দীর্ঘমেয়াদি ও বাস্তবভিত্তিক কৌশলের অভাব। প্রতিবারই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দাবি করে– তারা দায়িত্ব পালন করেছে; বাস্তবে তার সুফল নগরবাসী পায়নি। এর ব্যর্থতার কারণগুলো চিহ্নিত করতে না পারলে কোনো স্থায়ী সমাধান আসবে না। বিশ্বের অনেক দেশ, এমনকি পার্শ্ববর্তী শহর কলকাতাও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশেও কার্যকর কৌশল প্রয়োগ করা সম্ভব। মশা নিধন ও ডেঙ্গু নিয়ে নতুন পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়ন ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যদি ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত থাকে, তাহলে আগস্টে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হতে পারে।”