
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচনের অনিয়ম ও ত্রুটি চিহ্নিত করে প্রতিবেদন তৈরি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া, কী কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দেশের দশ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছে সংস্থাটি।
অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এরপর লিখিত নির্দেশনায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন৷
নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, বিগত নির্বাচনের অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো সনাক্ত করে প্রতিবেদন ইসি সচিবালয়ে পাঠাতে হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে দেশের ইতিহাসে ব্যাপক বিতর্কিত নির্বাচন হিসেবে মনে করা হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এক তরফা ভোট হয়, যে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জন। নির্বাচনি ইতিহাসে যা বিরল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সবগুলো দল অংশ নিলেও রাতের ভোট বলে অভিহিত করা হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ও শরিকরা সাতটি আসন পায়, যা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের সন্দেহকে দৃঢ় করে তোলে।
এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে বাইরে রেখে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখানো হয়। এতে টানা চার বারের মত ক্ষমতায় আসে দলটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে ইসি সংস্কারের পর এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠন হলে বিভিন্ন মহল থেকে ওই তিন নির্বাচনে অনিয়মের কারণ খুঁজে বের করার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে৷ এমনকি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসেও সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তা খুঁজে বের করার দাবি তোলেন।
নাসির উদ্দিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়াই নির্বাচন কমিশনের প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অমূল্য অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। আপনারা ভাল নির্বাচনও দেখেছেন, খারাপ নির্বাচনও দেখেছেন। ভালর অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করবেন। খারাপ অভিজ্ঞতাকে পরিহার করবেন। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করে নির্বাচন কমিশনের আস্থার সংকট দূর করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শ্রদ্ধার আসনে বসাতে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কমিশনের কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে। যে কোন সময় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচনি ব্যবস্থা কি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হল, এটি কমিশনকে অবগত করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলা, দুর্বলতা ও দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেজন্য আগাম সর্তক থাকতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার কর্মকর্তাদের বলেন, ‘বিগত নির্বাচনের ত্রুটি সনাক্ত করে তা কটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। জনগণ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতরা বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে। বর্তমান সময়ে নির্বাচনি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’
গেল ২১ নভেম্বর দায়িত্ব নেন নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন। ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছেন৷ পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে৷ একাদশ সংসদ নির্বাচন করেছেন কেএম নুরুল হুদার কমিশন। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। অভ্যুত্থানের এক মাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম বারের মত কমিশন নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন।