
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পরপরই দেশে হওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্প ও ধারাবাহিক কম্পনকে ‘আল্লাহর খেলা’ বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো এক অডিও বার্তায় তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, তার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার দিনই চট্টগ্রাম বন্দরের লিজ সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে এবং এর পরই দেশে একাধিক ভূমিকম্প আঘাত হানে। তার ভাষায়, ‘এটা আল্লাহরই একটা খেলা। আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিলো। সেদিনই আবার পোর্ট বিক্রির চুক্তি করে ফেললো। তারপরই ব্যাপকভাবে ভূমিকম্প হলো, তাও আবার পরপর দুইদিন।’
ভূমিকম্পে নিহতদের জন্য দোয়া ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যারা মারা গেছেন তাদের জন্য দোয়া করি এবং যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাই। আহতদের যেন দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হয় তা কামনা করি, কারণ চিকিৎসার ক্ষেত্রেও রয়েছে মারাত্মক অব্যবস্থা। চিকিৎসা কেন পাবে না, আমি ক্ষমতায় থাকলে তো কখনো এ রকম হতো না। আমরা সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার ও চিকিৎসা শুরু করতাম, কিন্তু তারা সব দিকেই ব্যর্থ।’
জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেন। একই মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত চুক্তির বৈধতা নিয়ে দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ৩০ জুলাই রুল জারি করে জানতে চেয়েছিল কেন চলমান প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পরে ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শুনানিতে বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি ফাতেমা নজীব লিজ প্রক্রিয়া স্থগিতের পক্ষে মত দেন, তবে জুনিয়র বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার রিটটি খারিজ করে দেন।
এদিকে চলতি বছরের ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে ওঠে। নরসিংদীর মাধবদী ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। এতে বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল দেখা দেয় এবং ১০ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২২, ২৩, ২৬ নভেম্বর এবং ৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে আরও কয়েকটি মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়।