
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) নিউইয়র্কভিত্তিক ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের টকশোতে একক অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আমি রাজনীতিতে আছি। আমার মতে, নির্বাচনের সময় রাজনীতিতে যারা আছে, তারা সরকারে থাকা উচিত না। তাই তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে সরে যাবো।
তবে তিনি এখনও স্পষ্ট করেননি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন কি না, কিংবা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেবেন কি না।
জুলাই আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকা আসিফ মাহমুদ টকশোতে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, সেনাবাহিনীর ভূমিকা, জুলাই আন্দোলনের মিত্রদের বিভাজন, নির্বাচন পরিস্থিতি, নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা এবং মুরাদনগরের সাম্প্রতিক ঘটনাসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেন।
তিনি দাবি করেন, পতাকাবাহী গাড়ি বা ক্ষমতার প্রতি আগ্রহ থেকে নয়, বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকার কারণেই তিনি সরকারে আছেন। তার মতে, এখনো জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদ এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি রয়েছে, যা শেষ না করলে “ঐতিহাসিক দায়” থেকে যাবে।
কয়েক মাস আগে দেওয়া এক ভিডিও বক্তব্যের প্রসঙ্গেও আসিফ মাহমুদ কথা বলেন। সেখানে তিনি দাবি করেছিলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মেনে নিতে চাননি। মঙ্গলবার এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটি সরকার গঠনের আগের ঘটনা। এক বৈঠকে সেনাপ্রধান বিরোধিতা করেছিলেন কারণ আওয়ামী লীগ ইউনূসের সমর্থক নয়। পরে সম্মত হলেও “বুকে পাথর চাপা” শব্দটি ব্যবহার করেন।
তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার বা সরকারের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই। ৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীর অবদানও তারা স্বীকার করেন, শুধু আওয়ামী লীগ বিষয়ক মতপার্থক্য ছিল।
তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, জাতীয় পার্টিকে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দাঁড় করাতে একটি মহল সক্রিয় রয়েছে, এমনকি কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ওই দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আসিফ মাহমুদের মতে, ড. ইউনূস সরকারের ভেতরেও একাধিক ক্ষমতার কেন্দ্র রয়েছে ৫ আগস্টের পর সামরিক বাহিনী ক্ষমতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তিও সক্রিয় রয়েছে।
স্থানীয় সরকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে, যার দায় তার ওপর পড়ছে। কিন্তু স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজন তার হাতে নেই। সব দল রাজি হলেও বিএনপি ও তাদের সহযোগী কয়েকটি দল রাজি হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এছাড়া মুরাদনগরে শিক্ষক নিপীড়ন ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তার বাবা বিল্লাল হোসেন জড়িত এমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অপপ্রচার হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানান।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, অনেকে মনে করছেন তিনি মুরাদনগর থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন, কিন্তু তা সত্য নয়। তিনি জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করতে চান এবং ঢাকাকেই নিজের রাজনৈতিক গন্তব্য হিসেবে দেখছেন।