
কুষ্টিয়ায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছয়জনের হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন ও বিচার শুরুর আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু যে রিভিউ আবেদন করেছিলেন, তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল খারিজ করেছে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-২ এর দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ সিদ্ধান্ত দেন। প্যানেলের নেতৃত্ব দেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ। অন্য সদস্য ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আদালতে ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও সিফাত মাহমুদ। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। উভয়পক্ষের যুক্তি শুনার পর ট্রাইব্যুনাল রিভিউ আবেদনটি বাতিলের নির্দেশ দেন।
এর আগে ২৭ নভেম্বর ইনু জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘সো-কলড’ হিসেবে উল্লেখ করে রিভিউ আবেদন করেছিলেন। প্রসিকিউশনের বক্তব্যে বলা হয়, তার মন্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার উপাদান রয়েছে এবং তাই আবেদনটি বাতিল করার দাবি করা হয়। আংশিক শুনানি শেষে এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি আজ অনুষ্ঠিত হয়।
চিফ প্রসিকিউটর আদালতে জানান, “হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু তিনি এ আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে বর্তমান সরকারের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নেই। অথচ সরকার গঠিত হয়েছে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে। এছাড়া জুলাই বিপ্লবকে সো-কল্ড বলে আখ্যায়িত করেছেন ইনু। সরকার নাকি সবাইকে ইনডেমনিটি দিচ্ছে, অথচ কাউকেই দায়মুক্তি দেয়নি। তাদের এমন বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তবে এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি।”
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ইনুর বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দেন। ওই প্যানেলের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
২৮ অক্টোবর ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী আদালতে আটটি অভিযোগের কিছু পড়ে শোনান এবং কোনো অভিযোগই সত্য নয় বলে অব্যাহতি আবেদন করেন। একই সঙ্গে তিনি ট্রাইব্যুনালকে এসব অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার অনুরোধ জানান।
গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে ইনুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন। জাসদ নেতার রাজনৈতিক জীবনেও উল্লেখযোগ্য যে, তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তথ্যমন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার নিজ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে হারান।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছয়জন নিহত এবং অনেকে আহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইনুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়। পরে তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল করে এবং প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করে।